অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ-এর প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা (সিআইও) রিয়াজ ইসলামের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন এর স্টাফ রিপোর্টার ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্য নিয়াজ মাহমুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার হুমকি দিয়েছে এলআর গ্লোবাল। এ সংক্রান্ত একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে পত্রিকাটিকে।
এলআর গ্লোবালের এমন অনৈতিক লিগ্যাল নোটিশ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) ও ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি (ঢাকসাস)।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইআরএফে’র সভাপতি শারমিন ইনভি ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক নিয়াজ মাহমুদ ইআরএফের একজন সদস্য। এলআর গ্লোবাল তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার যে হুমকি দিয়েছে সেটা স্বাধীন মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে হুমকি। আমরা এই হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।এলআর গ্লোবাল তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন বলেও ইআরএফ নেতৃবৃন্দ আশা করেন।
এদিকে, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন এটিকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় ক্যাপিটাল মার্কেট জানালিস্টস ফোরামের সদস্য দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন-এর স্টাফ রিপোর্টার নিয়াজ মাহমুদকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলার হুমকি দিয়েছে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।
‘আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে এলআর গ্লোবালের বিভিন্ন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ নিয়ে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, মূল্যায়ন রিপোর্ট জালিয়াতি এবং বিদেশি অংশীদারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত রিপোর্টেও প্রমাণ মিলেছে।
‘বিদেশি শেয়ার হোল্ডাররাও এ ব্যাপারে বিএসইসিতে লিখিত অভিযোগ ও আইনি নোটিশ দিয়েছে।‘এসব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা গণমাধ্যমের কাজ। কিন্ত এই রিপোর্টের কারণেই মামলার হুমকি দিয়েছে এলআর গ্লোবাল। আইনি নোটিশে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশককে একই হুমকি দেয়া হয়েছে।
‘সিএমজেএফ মনে করে, এ ধরনের হুমকি মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের বিকাশের অন্তরায়। এছাড়া এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি।
‘এছাড়া শুরু থেকেই সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করে আসছে। ফলে এলআর গ্লোবালের এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে গণমাধ্যমের স্বার্থে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে সিএমজেএফ। সাংবাদিক নিয়াজ মাহমুদ সোহেলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতিও। সমিতির সভাপতি হাসান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সাগর যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে লিগ্যাল নোটিশ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।
যা বললেন-নিয়াজ মাহমুদ
প্রতিবেদন, লিগ্যাল নোটিশ ও মামলার হুমকির বিষয়ে নিয়াজ মাহমুদ বলেন, যে সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এল আর গ্লোবাল লিগ্যাল নোটিশ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলার হুমকি দিয়েছে, তার সব দলিল আমার কাছে আছে। সব তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়েই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা লিগ্যাল নোটিশটি ২১ মার্চ ইস্যু করেছে, কিন্তু আমি ২৮ মার্চ তা রিসিভ করেছি।
তিনি বলেন, ‘আতংকের বিষয় হচ্ছে, সব তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও এলআর গ্লোবাল লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। তবে কি সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না? এই কার্যক্রমের মাধ্যমে এল আর গ্লোবাল তাদের দুর্বলতাকে প্রকাশ করল।
উল্লেখ্য: এলআর গ্লোবালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তার নানান অনিয়ম নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিস্তর অভিযোগ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি অংশীদারেরা। এ বিষয়ে তদন্তও করেছে বিএসইসি। তদন্তে এলআর গ্লোবালের সিআইও রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এসব অনিয়মে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিদেশি উদ্যোক্তারা এখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। বলা হয়েছে, রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বিএসইসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ঢাকা ট্রিবিউন-এর সম্পাদক জাফর সোবহান, প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ এবং স্টাফ রিপোর্টার ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্য নিয়াজ মাহমুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার হুমকি দিয়েছে এলআর গ্লোবাল।