নিজস্ব প্রতিবেদক(অনলাইন ডেস্ক) ::
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ফেরদৌসের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) এক নারী কর্মকর্তা। প্রথম সংসার ভেঙে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অস্বীকার করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে ওই মামলায়।
সোমবার (২ জানুয়ারি) বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালতের বিচারক মো. ইয়ারব মামলাটি আমলে নিয়ে জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের সহকারী পরিচালক ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ছিলেন।
দুজনের কর্মস্থল বরিশালে থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে পুনরায় যোগাযোগ গড়ে ওঠে এবং মাহমুদুল হাসান ফেরদৌসের আমন্ত্রণে প্রায়ই বরিশাল অফিসার্স মেসে ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশ নিতেন ববির ওই সহকারী পরিচালক। এছাড়াও নিষেধ করার পরও প্রায়ই বাদীর বাসায় যাওয়া আসা এবং ফোনে যোগাযোগ করতেন পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি বাসায় সরকারি গাড়ি এবং দেহরক্ষী পাঠিয়ে ওই নারীকে ব্যাডমিন্টন খেলার কথা বলে ক্লাবে নিয়ে আসতেন তিনি। এর মধ্যে দুজনের একাধিকবার শারীরিক সর্ম্পক হয়। এমনকি সেই ছবি ওই নারীর প্রথম স্বামীর কাছে পৌঁছালে সংসার ভেঙে যায়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তার স্বামী তাকে তালাক দেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে ১০ এপিবিএনের প্রধান কমান্ডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করতে গেলে নানা কৌশলে তাকে আটকে দেন ফেরদৌস। ৬ ফেব্রুয়ারি ১০ এপিবিএনের বাংলোতে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা তার পরিচিতজনদের উপস্থিতিতে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক তাকে বিয়ে করেন। এ সময় বাদী কাবিনের কথা জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ৩/৪টি বিভাগীয় মামলার তদন্ত চলার অজুহাত তুলে পরে কাবিন করার প্রতিশ্রুতি দেন। তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক এবং অফিশিয়াল কর্মসূচিতে যোগ দেন। এছাড়া বাদীকে নিয়ে নিজ বাসায় বসবাস শুরু করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। হঠাৎ করে গত মার্চ মাসে এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাদীকে মোবাইলে জানায় তাদের বাসায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার প্রথম স্ত্রী এসেছেন। যেটা শুনে হতবাক হন বাদী।
এদিকে পরবর্তীতে কাবিনের বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সংসার করা পুলিশ কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালকের মধ্যে কথা কাটাকাটি এমনকি বাদীকে মারধরও করেন পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বরিশাল এপিবিএন কার্যালয়ে একবার কাবিন ছাড়াই কোরআন সামনে রেখে বিয়ে সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা এপিবিএনে বদলি হলে সেখানে এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে কাবিনসহ বিয়ে করেন। কিন্তু কাবিন বাদীকে দেননি। এরপর বাদী বরিশালে চলে আসেন।
দুজনের মধ্যে সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর যোগাযোগ হয়। এরপর থেকেই ওই পুলিশ কর্মকর্তা সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। মাঝে মধ্যে সরকারি অফিশিয়াল নম্বরটি খুললেও বাদীর কল দেখে কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা।
যোগোযোগ করা হলে এপিবিএনের ওই কর্মকর্তা বাদীকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর পাশাপাশি, চাকরিতে প্রতিবন্ধকতা, গুলি করে হত্যা এবং গুমের হুমকি দেন। এ ঘটনায় ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করার জন্য যান ওই নারী। কিন্তু মামলা না নিয়ে থানা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌসের বক্তব্য জানা যায়নি।
১০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা বলেন, মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি আইজি অফিসে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া বরিশালেও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস এখন আর বরিশালে নেই। গত নভেম্বরে তিনি বদলি হন। বর্তমানে গাজীপুরে রয়েছেন বলে জেনেছি।